সর্বশেষ সংবাদ
হাতের তালুর মতো চেনা উইকেটেও ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারল না বাংলাদেশ। ফেরার ম্যাচে তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিছুটা অভিজ্ঞতার প্রমান দিলেন বটে, কিন্তু তাতে দলের বড় পরাজয়ও এড়ালো না। বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে ৪১.১ ওভারে স্রেফ ১৬৮ রানে গুটিয়ে ৮৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ হারল লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বাধীন দল।
শনিবার টস জিতে আগে ব্যাট করা নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি। কিন্তু মিরপুরের কঠিন উইকেটে দারুণ দলীয় প্রচেষ্টায় ২৫৪ রানের সংগ্রহ গড়ে দলটি। পরে বল হাতে রেকর্ড গড়েন ইশ সোদি। একাই তুলে নেন ৩৯ রানে ৬ উইকেট। দেশের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে ৬ উইকেট শিকার করা প্রথম বোলার তিনি। ব্যাট হাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ৩৫ রান করে। ম্যাচ সেরা হতে আর কী লাগে।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে আবারও ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। বোলিং প্রাকটিস মুটামুটি মানের হলেও ব্যাটিংটা হলো যাচ্ছেতাই। কিছুটা স্বস্তির বিষয় ফেরার ম্যাচে তামিম-মাহমুদউল্লাহর রান পাওয়া।
হোম অব ক্রিকেটে জয়ের জন্য রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হতে মতো বাংলাদেশের। কিন্তু বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী শুরু করেন লিটন-সৌম্য-হৃদয়রা। ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও। কোনো ফিফটি জুটিও নেই। সর্বোচ্চ ৪৯ রান মাহমুদউল্লাহর, ৪৪ রান তামিমের। ১ উইকেটে ৬০ থেকে ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
সাজঘরের পথটা চিনিয়ে দেন লিটন। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ১৯ রানে বাজে শটে কাইল জেমিসনের বলে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন দলপতি। ৪১ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই দৃশ্যপটে আসেন সোদি। ১১তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। সেই শুরু।
ওভারের চতুর্থ বলে দূর্বল শটে মিড অফে ধরা পড়েন তানজিদ হাসান তামিম। আর শেষ বলে সোদিকেই ফিরতি ক্যাচ প্রাকটিস করান সৌম্য সরকার। দুই বছর পর ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ে ফিরে সৌম্য টিকেছেন ২ বল। রান করতে পারেননি কোনো।
তিন বাউন্ডারিতে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে তানজিদ থেমে যান ১২ বলে ৩ চারে ১৬ রানে। উইকেটে এসে ৭ বল টিকেন হৃদয়। সোদির গুগলি পড়তে না পেরে হয়ে যান বোল্ড।
শুরুতে ভুগতে থাকলেও তা কাটিয়ে উঠে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন তামিম। কিন্তু তিনিও হন সোদির শিকার। পিছন দিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। চোট কাটিয়ে ব্যাটিংয়ে ফিরে ৫৮ বলে ৪৪ রান করেন এই ওপেনার। ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল তখন মহাবিপদে।
মাহমুদউল্লাহর ব্যাট কিছুটা আশা দেখালেও সেই বিপদ আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে মেহেদি হাসানকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। মেহেদিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সোদিই।
মাহমুদউল্লাহ আউট হন খুবই ফালতু একটা বলে। অনিয়মিত স্পিনার ম্যাকনকির বলটি লেগ সাইডেরও অনেক দূর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। চাইলে উড়িয়েও মাঠছাড়া করতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু দিলেন শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ। ৭৬ বলে ৪৯ রান করে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটার।
৯ বলে কোনো রান না করে সোদির ষষ্ঠ শিকার হাসান মাহমুদ। বোল্ড হয়ে যান তিনি। লেজ ছেটে দেন ফার্গুসন ও জেমিসন
দিনের শুরুটা অবশ্য দারুণ ছিল বাংলাদেশের। অভিষেক ম্যাচে ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন খালেদ আহমেদ। তবে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মেহেদি হাসান। দুটি শিকার ধরেন মুস্তাফিজুর রহমান। একটি নেন নাসুম আহমেদ। ৪৯.২ ওভারে গুটিয়ে যায় কিউইরা।
নিউ জিল্যান্ডকে এদিনও শুরুতেই চেপে ধরে টাইগাররা। তৃতীয় ওভারে উইল ইয়াংকে কট বিহাইন্ড করেন মুস্তাফিজ। তার পরের ওভারে প্রথম স্লিপে লাফিয়ে ফিন অ্যালেনের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। খালেদের বলে স্কয়ার লেগ থেকে চ্যাড বসের ক্যাচ নেন তাওহিদ হৃদয়। অষ্টম ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড।
চতুর্থ উইকেটে টম ব্লান্ডেল আর হেনরি নিকোলস জুটি থেকে আসে ১১১ বলে ৯৫ রান। নিকোলসকে কট বিহাইন্ড করে ব্রেকথ্রু এনে দেন খালেদ। ৬১ বলে ৪৯ রান করেন নিকোলস।
রাচিন রবীন্দ্রকে এলবিডব্লিউ করার পর উইকেটে থিতু হওয়া টম ব্লান্ডেলকে দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে উইকেট ছিটকে দেন হাসান মাহমুদ। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে প্রতিপক্ষ শিবির।
অষ্টম উইকেটে ৪০ বলে ৩২ রানের জুটি গড়েন কাইল জেমিসন ও ইশ সোদি। মেহেদিকে হাঁকাতে গিয়ে আকাশে তুলে মেহেদির হাতেই ধরা পড়েন জেমিসন। বিচ্ছিন্ন হয় জুটি।
অধিনায়ক লকি ফার্গুসনকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি। সোদিকে কট বিহাইন্ড করে শেষ শিকার খালেদের। ততক্ষণে লড়াই করার পুঁজি পেয়ে গেছে ব্ল্যাক ক্যাপ বাহিনী। ৩৯ বলে ৩ ছক্কায় ৩৫ রান করেন সোদি।
সোদিকে মানকাডিং করেছিলেন হাসান। কিন্তু তাকে ব্যাটিংয়ে ফিরিয়ে আলোচনার জন্ম দেন লিটন। ১৭ রানে অপরাজিত থাকা সেই সোধি ফিরে এসে আরও ১৮ রান যোগ করেন, নিউজিল্যান্ড যোগ করে আরও ৩০। তাতে নিউজিল্যান্ডের রানটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৪ রানে।
বৃষ্টির কারণে দুই দলের প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হয়। মঙ্গলবার একই মাঠে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ২৫৪ (অ্যালেন ১২, ইয়াং ০, বস ১৪, নিকোলস ৪৯, ব্লান্ডেল ৬৮, রবীন্দ্র ১০, ম্যাকনকি ২০, সোদি ৩৫, জেমিসন ২০, ফার্গুসন ১৩, বোল্ট ১*; অতিরিক্ত ১২; মুস্তাফিজ ১০-১-৫৩-২, হাসান ১০-১-৪৬-১, খালেদ ৯.২-১-৬০-৩, মেহেদি ১০-০-৪৫-৩, নাসুম ১০-০-৪৪-১)।
বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ১৬৮ (তামিম ৪৪, লিটন ৬, তানজিদ ১৬, সৌম্য ০, হৃদয় ৪, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, মেহেদি ১৭, নাসুম ২১, হাসান ০, মুস্তাফিজ ২*, খালেদ ১; অতিরিক্ত ৮; বোল্ট ৮-০-৩৭-০, জেমিসন ৭-১-৩২-১, সোদি ১০-১-৩৯-৬, ফার্গুসন ৬.১-১-২৮-১, রবীন্দ্র ৮-০-২৬-০, ম্যাকনকি ২-১-৩-১)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইশ সোদি।